“ধলাই নদীর প্রায় ১০ স্থানের প্রতিরক্ষা বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বৃষ্টি ও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ভাঙন বৃদ্ধি পেতে পারে।”
প্রবেশ করছে পানি। এতে দ্রুত মানুষের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করছে। অনেকে ঘর থেকে মালামাল সরানোরও সময় পাচ্ছেন না।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল জানান, জেলার জুড়ি নদীর পানি বিপৎসীমার ২০৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মনু নদীর পানি ৩৫ সেন্টিমিটার ও কুশিয়ারা নদীর পানি ২১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, বুধবার মৌলভীবাজারে ১১০ সেন্টিমিটার ও মৌলভীবাজারের সীমান্তবর্তী ভারতের কৈলাস শহরে ১০৬ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায়ও উজানে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যা মৌলভীবাজারের মনু, ধলই ও জুড়ি নদী দিয়ে নেমে আসবে বলে জানান তিনি।
ধলই নদী ছাড়া বাকী সব নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “কমলগঞ্জে কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে ধলাই নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। পানি বিপদ সীমার ২৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
তবে মঙ্গলবার কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চৈতন্যগঞ্জ, রহিমপুর ইউনিয়নের চৈত্রঘাট ও মুন্সিবাজার ইউনিয়নের খুশালপুরে ধলই নদীর বাঁধ ভেঙ্গে প্রচুর পানি গ্রামাঞ্চলে প্রবেশ করায় রাত ১০টার দিকে পানির প্রবাহ বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার নিচে নেমে আসে।
ভাঙন দিয়ে পানি প্রবেশ করে নারায়ণপুর, চৈতন্যগঞ্জ, বাঁধে উবাহাটা, খুশালপুর ছয়কুট, বড়চেগ, জগন্নাথপুর, প্রতাপী, গোপীনগর, আধকানী, কাঁঠালকান্দিসহ প্রায় ৪০টি গ্রামে বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলি জমি ও বাড়ি-ঘরে পানি প্রবেশ করছে।
পানিতে তলিয়ে গেছে কমলগঞ্জ-মৌলভীবাজার সড়কের ছয়কুট এলাকায় এবং আদমপুর ইউনিয়নের কাঁঠালকান্দি-আধাকানি সড়ক।
পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাকিব আহমেদ বলেন, পানি বৃদ্ধি পেয়ে ধলাই নদীর সাথে সংযুক্ত ড্রেন দিয়ে পানি প্রবেশ করে পৌর এলাকার তিনটি ওয়ার্ডের পানিশালা, চন্ডীপুর ও নছরতপুর এলাকায় বসতবাড়ি, ডাক বাংলো, কমলগঞ্জ মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও বাজারে পানি প্রবেশ করেছে।
এছাড়া উপজেলার পৌর এলাকার খুশালপুর, নিম্নাঞ্চল পতনউষার, মুন্সিবাজার, আদমপুর, ইসলামপুর ও আলীনগর এলাকার বৃষ্টির পানি লাঘাটা ও খিন্নি ছড়ায় পানি উপচে পড়ে ফসলী জমি তলিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, “ধলাই নদীর রামপাশা, শিমুলতলাসহ প্রায় ১০ স্থানের প্রতিরক্ষা বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বৃষ্টি ও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ভাঙন বৃদ্ধি পেতে পারে।”
ধলাই নদীটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রয়েছে বলেও জানান তিনি।
ভারতের ত্রিপুরার গণমাধ্যমকর্মী দেবাশীষ দত্ত মোবাইলে জানান, ত্রিপুরা ও আসামে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ বৃষ্টির পানি আবার বাংলাদেশের সুরমা, কুশিয়ারা, মনু, ধলাই ও খোয়াই নদী দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়।
শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার ২ মিলিমিটার মঙ্গলবার ১৩৬ মিলিমিটার ও বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। পর্যাপ্ত পরিমাণের ত্রাণ মজুদ আছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে এবং সার্বক্ষণিক নজরদারি রয়েছে। এ ছাড়া সবকটি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।